• রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৫৪ পূর্বাহ্ন |

নাটোরে সহপাঠীকে হত্যা করল তিন কিশোর

5_317388সিসি ডেস্ক: নাটোরে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণের দাবিতে মো. তানভীর (১১) নামে এক মাদ্রাসাছাত্রকে হত্যার ঘটনায় আটক করা হয়েছে তার তিন সহপাঠীকে। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে শহরের আলাইপুর এলাকার আশরাফুল উলুম কওমি মাদ্রাসার পেছনের একটি সেপটিক ট্যাংক থেকে তার লাশ উদ্ধার করে র‌্যাব।
র‌্যাব-৫ ও স্থানীয়রা জানান, শহরের হাফরাস্তা বড়গাছা এলাকার ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম তুষারের ছেলে মো. তানভীর আলাইপুর এলাকার আশরাফুল উলুম কওমি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করত। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে বাবা-মা এখন দিশেহারা। তারা খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
নাটোর সদর থানা ও র‌্যাব সূত্র জানায়, ২৫ আগস্ট বিকালে মাদ্রাসা থেকে বের হয়ে সহপাঠীদের সঙ্গে খেলতে গিয়ে তানভীর নিখোঁজ হয়। রাতে মোবাইল ফোনে নিখোঁজ ছাত্রের বাবা সাইফুল ইসলাম তুষারের কাছে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। এ ব্যাপারে নিখোঁজ ছাত্রের বাবা নাটোর থানায় জিডি করেন ও র‌্যাব-৫-কে জানিয়ে ছেলের খোঁজে গত কয়েকদিন ধরে শহরে মাইকিং করেন। পরে মোবাইল ফোন ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে র‌্যাব ওই মাদ্রাসার দুই ছাত্র বায়েজিদ হাসান ও হুমাইদ হোসেন এবং ওই মাদ্রাসার সাবেক ছাত্র নাঈমকে আটক করে।
আটক বায়েজিদ হাসান বাগাতিপাড়া উপজেলার নওপাড়া গ্রামের বাবুল হাসানের ছেলে, হুমাইদ হোসেন সিংড়া উপজেলার জোর মল্লিকা গ্রামের মোক্তার হোসেনের ছেলে এবং মো. নাঈম নাটোর শহরের কালুর মোড় এলাকার আবদুর রহিমের ছেলে।
ওই তিনজনের দেয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী আলাইপুর এলাকার আশরাফুল উলুম কওমি মাদ্রাসার পেছনের একটি সেপটিক ট্যাংক থেকে তানভীরের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
র‌্যাব-৫-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহবুব আলম জানান, আটক তিন কিশোর ভারতীয় টিভি চ্যানেলের সিরিয়ালে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা দেখে উৎসাহিত হয়ে তানভীরকে অপহরণের পরিকল্পনা করে। আটকের পর তারা র‌্যাবকে জানায়, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ২৫ আগস্ট বিকালে মাদ্রাসার পাশের একটি পরিত্যক্ত ঘরে নিয়ে গিয়ে তানভীরকে কাপড় দিয়ে গলা বেঁধে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে ক্ষুর দিয়ে গলা কেটে তারা তাকে হত্যা করে। লাশ সেই পরিত্যক্ত বাড়িতে রেখে প্রাচীর টপকে নাঈমের দোকানে গিয়ে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ক্ষুর এবং নিজেদের হাত-পায়ে লেগে থাকা রক্ত পরিষ্কার করে। পরে ভোররাতে লাশ তাদেরই মাদ্রাসার কাছের একটি বাড়ির পেছনের সেপটি ট্যাংকে ফেলে গুম করে।
এরপর তারা দুটি নতুন সিম কিনে যার একটি দিয়ে মুক্তিপণের টাকা গ্রহণের জন্য বিকাশ অ্যাকাউন্ট খোলে এবং অন্যটি দিয়ে তানভীরের বাবার কাছে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণের দেনদরবার করে। একসময় তারা মুক্তিপণের দাবি পাঁচ লাখ থেকে এক লাখ টাকায় নামিয়ে আনে।
র‌্যাবের অধিনায়ক আরও জানান, মুক্তিপণের টাকা গ্রহণের কৌশল হিসেবে প্রথমে বিকাশে টাকা পাঠানোর কথা বললেও ঝুঁকি থাকায় চলন্ত ট্রেন থেকে টাকা ছুড়ে ফেলে দেয়ার সিদ্ধান্ত তানভীরের বাবাকে জানানো হয়। এতেও ঝুঁকি থাকতে পারে মনে করে অপহরণকারীরা কোথাও থেকে বোরকা পরে মুক্তিপণের টাকা সংগ্রহের কথা জানালে তানভীরের বাবা তার ছেলের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার পরেই টাকা দিতে রাজি হন। এ সময় অপহরণকারীরা বায়োজিদকে তানভীর সাজিয়ে বাবার সঙ্গে কথা বলায়। এ সময় তানভীরের বাবা সাইফুল ইসলাম তুষার বুঝতে পারেন এটি তার ছেলের কণ্ঠ নয়। একপর্যায়ে মোবাইল ফোন ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে টানা ২২ ঘণ্টার এক শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান চালিয়ে র‌্যাব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত তিনজনকেই আটক করে তানভীরের লাশ উদ্ধার করে।
এ অভিযানের সময় উপস্থিত ছিলেন র‌্যাব-৫-এর অধিনায়ক কর্নেল মাহবুব হোসেন, নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুন্সি শাহাবুদ্দিন, র‌্যাব-৫-এর এএসপি জামাল আল নাছের, নাটোর সদর সার্কেলের এএসপি রফিকুল ইসলাম, সদর থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান, নিহত কিশোরের বাবা সাইফুল ইসলাম তুষার ও মা ফিরোজা বেগম।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আর্কাইভ